পাইলট প্রিথুলাকে নিয়ে যা বললেন অভিনেত্রী ভাবনা

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার একটি বিমান সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ২টা ২০ মিনিটে বিধ্বস্ত হয়ে বিমানবন্দরের পাশের একটি খেলার মাঠে পড়ে যায়। বিমানটিতে চারজন ক্রু ও ৬৭ যাত্রী ছিল। এ ঘটনায় ২৬ বাংলাদেশিসহ ৫১ জন নিহত হন। আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন ৯ বাংলাদেশিসহ ২১ জন।

এ ঘটনায় বিমানটির সহকারী পাইলট প্রিথুলা রশিদও মারা যান। তিনি ছিলেন ইউএস-বাংলার প্রথম নারী পাইলট। অল্প বয়সেই এই সম্ভাবনাময়ী পাইলটের জীবনাবসান ঘটে। কিন্তু জীবনের বিনিময়ে বীর ওই নারী পাইলট বাঁচিয়ে গেছেন ১০ নেপালি যাত্রীর প্রাণ, যদিও এ নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। অবশ্য এর নির্ভরযোগ্য কোনো সত্যতাও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন অভিনেত্রী ভাবনা।
পোস্টে ভাবনা লিখেছেন, 'প্রিথুলা রশিদ' কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের নারী সহকারী বৈমানিক। ইউএস-বাংলার প্রথম নারী বৈমানিক। আমরা খুব সহজেই নারী শব্দটা বলে ফেলি তাই না? প্রিথুলা আপনার আমার মতোই মানুষ ছিল। আপনার মৃত্যুর সময় যেমন কষ্ট হবে ওর-ও ঠিক তাই হয়েছে! কিন্তু ওর আর আপনার মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। ও শুধু বৈমানিক নয়, একজন সাহসী নারীও বটে।
তিনি লেখেন, ভেবে দেখুন তো আপনি কয়তলা উঁচু পর্যন্ত দাঁড়িয়ে সহসা কাজ করতে পারবেন? ১০/২০/৩০? এই মেয়ে আকাশে ভেসে বেড়ানোর কলিজা রাখে, যেটার যোগ্যতা আপনার-আমার নেই। যে মেয়ে তেলাপোকা দেখে ভয় পায় সে মেয়ে একসময় সন্তানের জন্য আগুনে লাফ দিতেও পারে, এটা একটা নারীই পারে।
পোস্টে এই অভিনেত্রী প্রশ্ন তুলেন, পাইলটদের সম্পর্কে কতটুকু জানেন আপনি? একটা কেবিন ক্রু' জীবন কেমন হয় জানেন? একটা মেয়ে নিত্য তার জীবন হাতে নিয়ে যাত্রীদের সেবা করে নিজের পরিবারকে রেখে দেশান্তর হয়,একটা অনিশ্চয়তা এই হয়তো দুর্ঘটনায় শেষ হতে পারে জীবন,ভেবে দেখেছেন? একটা পাইলট কতটা মানুষিক চাপ মাথায় রাখে যখন সে আকাশে ওড়ে প্রত্যেকটা যাত্রীর জানমালের দায়িত্ব তার হাতে থাকে, কখনও ২ জন মানুষের জীবন এর দায়িত্ব নিয়ে দেখেছেন?
ভাবনা তার পোস্টে লেখেন, প্রিথুলা চাইলে হয়তো নিজে বাঁচতে পারত, পাইলটদের সে ব্যাকআপটা থাকে। কিন্তু যাত্রীদের কথা ভেবে একটা পাইলট সর্বাত্মক চেষ্টা করে প্রত্যেকটা জীবন বাঁচাতে। প্রিথুলা নিজের জীবন বাজি রেখে ১০ জন যাত্রীর জীবন বাঁচিয়েছেন, জি হ্যাঁ, তিনি একজন নারী! একজন নারী বলেই নিজেকে বিসর্জন দিতে পেরেছেন। নেপাল তাকে “ডটার অব বাংলাদেশ” বলে সম্মান দিচ্ছে আর আমাদের দেশের লোকজনের মন্তব্য! নারী শব্দটা উচ্চারণ করার আগে যোগ্যতা অর্জন করে তারপর উচ্চারণ করবেন। নারী যদি আপনার মতো কাউকে জন্ম দিতে পারে, নারী সব পারে। ভারতের নির্জা একজন সাহসী নারী এর ঘটনাটা হয়তো খুব কমসংখ্যক মানুষ জানে, দয়া করে জেনে নেবেন একজন পাইলটের জীবন কেমন, একজন কেবিন ক্রু কীভাবে কাজ করে। মৃত্যুর মুখোমুখি এরা প্রতিনিয়তই হয়। হয়তো বলতে পারেন সবখানেই রিস্ক আছে। তা আছে, তবে বৈমানিক হওয়াটা মুখের কথা নয়।
তিনি আরও লিখেন, বাংলাদেশে খুব কমসংখ্যক নারী পাইলট আছে, আমাদের গর্ব হওয়া উচিত,এসব মেয়েরা আকাশ ছুঁতে পারছে। এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেশটাকে। কিছু বললেই নারীবাদী মন্তব্য করার আগে ভাবুন ১০ বার, কতটা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে একটা নারী ওসব কর্মক্ষেত্রে পদার্পণ করে।বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সব বৈমানিকদের কেবিন ক্রুদের তাদের সাহসিকতার জন্য সালাম জানাই। সালাম জানাই সাহসী নারী প্রিথুলা রশিদকে…..! দ্য ডটার অব বাংলাদেশ।

No comments

Powered by Blogger.